‘ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে’

1 min read

নিউজ ডেস্ক: জামালপুরের সরিষাবাড়ি, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ ও জামালপুর সদরের চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা ভুট্টা তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। পাইকারের লোক ক্ষেত থেকেই শুকনো ভুট্টা ৮১৫ টাকা থেকে ৮৪০ টাকা মন দরে কিনে নিচ্ছে।

চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ পলি মাটির জমিতে যে দিকে তাকায় শুধু ভুট্টা আর ভুট্টার নাকড়ি পড়ে আছে। কেউ ভুট্টার থোর গাছ থেকে তুলে জড়ো করছে। আবার কেউ কেউ একত্র করছে। কোন কোন কৃষক আবার মেশিনে মাড়াই করছেন। মাড়া করা ভুট্টা কৃষাণীরা নেটের উপর শুকাচ্ছেন। আবার কেউ পাইকারদের সঙ্গে দাম মিটিয়ে বস্তায় ভরছেন।

অল্প দিনে কম খরচে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় ভুট্টা চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলায় ১১ হাজার চারশ ৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জামালপুর সদরে ৪শ ২০ হেক্টর, সরিষাবাড়িতে ১ হাজার ৫শ ৩৫ হেক্টর, মেলান্দহে ১শ ২০ হেক্টক, ইসলামপুরে ১ হাজার ৬শ ২০ হেক্টর, দেওয়ানগঞ্জে ৫ হাজার ২শ হেক্টর, মাদারগঞ্জে ৯শ ৬০ হেক্টর ও বকশীগঞ্জে ১ হাজার ১শ ৯৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে।

জানা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলার আটটি ইউপিতে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চরাঞ্চলের পলি মাটিতে ব্যাপক আকারে ফলন হয়েছে। চাষীরা যে যার মতো করে বিভিন্ন জাতের ভুট্টা চাষ করেন। ফলনও হয়েছে তেমনি। প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ মন থেকে শুরু করে ৫০ মন পর্যন্তও হয়েছে।

কৃষক দুদু মিয়া জানান, ভুট্টা চাষে অনেক লাভ। প্রতিবিঘা জমিতে খুব বেশি হলে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ মন ভুট্টা হচ্ছে। তাতে দেখা যায় চার ভাগের তিন ভাগই লাভ।

কৃষক রফিকুল ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। তিনিই এলাকার সেরা চাষি। বিঘাতে তার ফলন হচ্ছে ৫০ মন হারে। ৭৭/২০ জাতের ভুট্টা চাষ করেছিলেন তিনি। ৭ বিঘা জমিতে সবমিলিয়ে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এবার ৭ বিঘা জমি থেকে সাড়ে ৩শ মন ভুট্টা পেয়েছেন। খরচ বাদে ২ লাখ টাকা লাভ হবে তার।

ভুট্টাচাষি বিটল মিয়া বলেন, ভুট্টা দুই জাতের আবাদ করা যায়। আগে ৬ মাস মেয়াদি ভুট্টা চাষ করেছিলাম। এখন নতুন করে আবার তিন মাস মেয়াদি বীজ এনে রোপণ করলাম। প্রতি মণ ভুট্টা ৮২০ টাকা দরে ক্ষেত থেকেই পাইকাররা কিনে নিয়েছে। এতে কৃষকের অনেক সময়ও বাঁচে।

ভুট্টা মাড়াই করতে মেশিন তৈরি করেছেন কৃষক সুমন মিয়া। তিনি নিজের চাষ করা ভুট্টা মাড়াইয়ের পাশাপাশি অন্য কৃষকদের ভুট্টাও মাড়াই করেন। প্রতি বিঘা জমির ভুট্টা মাড়াই করে তিনি ৪শ টাকা করে নেন। এ সপ্তাহে তিনি ৮০ বিঘা জমির ভুট্টা মাড়াই করেছেন। এতে তিনিও বেশ লাভবান হয়েছেন।

কৃষক বাবু মিয়া জানান, দেশে করোনাভাইরাসের কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে দাম ও পাইকারদের চাহিদা একটু কমেছে। দেশের এ অবস্থা না হলে দাম আরো বেশি হতো।

ভুট্টা চাষি সোবহান আলী বলেন, যেসব জমিতে আগে বোরো চাষ করতাম এখন ভুট্টা করছি। বোরো চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি ভুট্টাতে পুরোটাই লাভ।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, ইসলামপুরে ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ১ হাজার ৬শ ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। যেসব জমিতে অন্য ফসল হয় না সেসব জমিতে মাত্র ১২০ দিনে অল্প ব্যয়ে এক বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকার ভুট্টা উৎপাদন করা সম্ভব।

জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় আশানুরূপ ভুট্টার চাষ হয়েছে। পোকার আক্রমণ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে।

+ There are no comments

Add yours