দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খান ও নুরুন্নবী ওরফে ম্যাক্সনকে দেশে ফেরাতে তৎপরতা শুরু হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ একটি সূত্র জানায়, ভারতে গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে। ঐ মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালদের তালিকায় শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খান ও নুরুন্নবী ওরফে ম্যাক্সনের নাম রয়েছে।
সন্ত্রাসী সাজ্জাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী ও পাঁচলাইশ থানায় ১২টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তার নাম খান সাজ্জাদ হোসেন ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শিবির সাজ্জাদ ওরফে আবদুল্লাহ ওরফে আবদুল্লাহ আল মামুন। এ নিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইন্টারপোলকে চিঠি দেয় নগর পুলিশের বিশেষ শাখা।
অপরদিকে, নুরুন্নবী ওরফে ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সাতটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। দুজনই বর্তমানে রয়েছেন ভারতে।
সাজ্জাদকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা শুরু হয় ২০১২ সালে। কিন্তু ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে ২০১২ সাল থেকে ভারতকে সাতটি স্মারকে বহিঃসমর্পণ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ঐ বছরই সাজ্জাদের বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারি করে ইন্টারপোল।
অন্যদিকে, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বারানগর থানার ডানলপ এলাকা থেকে ম্যাক্সনকে গ্রেফতার করে দেশটির সিআইডি পুলিশ।
সে সময় ভারতীয় পুলিশ জানায়, বাংলাদেশে ২২টি মামলা রয়েছে ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে। নিজেকে বাঁচাতে এক সময় দেশ ছেড়ে ওমান পাড়ি জমান ম্যাক্সন। সেখানে গিয়ে রং মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে তার সহযোগী দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন ধরা পড়লে পালিয়ে কলকাতা যান তিনি। নাম পাল্টে হয়ে যান তমাল চৌধুরী। নিউ মার্কেটে শুরু করেন মাছ বিক্রি। মধ্যমগ্রামের এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ডানলপ এলাকায় ভাড়া বাসায় ঐ মহিলাকে নিয়ে থাকতেন।
গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে তমাল চৌধুরী পরিচয়ের ভারতীয় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্যান কার্ড, আধার কার্ডসহ একাধিক কাগজপত্র ও টাকা উদ্ধার করা হয়।
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, সাজ্জাদ ও ম্যাক্সনকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার জাহানপুরের আলতাফ মিয়া বাড়ির আবদুল লতিফের ছেলে ম্যাক্সন। ২০১১ সালে একটি ডাকাতির মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ম্যাক্সনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যে বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকা থেকে দুই সহযোগী সারোয়ার ও গিট্টু মানিককে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একে-৪৭সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এরপরই আলোচনায় আসে ম্যাক্সন-সারোয়ার জুটি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তারা। পরে সাজ্জাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে কারাগারে থাকা শিবিরের আরেক সন্ত্রাসী নাছিরের অনুসারী হয়ে ওঠেন ম্যাক্সন। ২০১৭ সালে জামিনে বেরিয়ে কাতারে পালিয়ে যান ম্যাক্সন ও সারোয়ার। সেখানে বসেই চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণ করতেন চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তাদের আরেক সহযোগী ইমতিয়াজ সুলতান ওরফে একরামও কাতারে পাড়ি জমান।
২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফোনে চাঁদা দাবি করেন সারোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম। তাদের স্থানীয় অনুসারীরা চাঁদাবাজির টাকা আদায় করতেন। তাদের কথামতো চাঁদা না দেওয়ায় একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বায়েজিদের নয়াহাটে ঐ ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রোলবোমা ছোড়া হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী থানায় কোনো অভিযোগ না করলেও এর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। একই সময় উজ্জ্বল দেওয়ানজী নামে আরেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নামে চাঁদা দাবি করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে- কাতারে থাকা সারোয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের নির্দেশে উজ্জ্বলের কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন তাদের অনুসারীরা। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে সারোয়ার-ম্যাক্সনের অনুসারী ৫ যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।